Saturday, September 13, 2008

আমার বর্ষাকাল - কবিতাগুচ্ছ৩

আগের গুচ্ছের ধারাবাহিক...
আমাকে তছনছ করে

আমাকে তছনছ করে দিলে, আমাকে থমকে দিলে আজ
মাত্র দশ মিনিটের দর্শন আমার সারাটা দিনকে পথে বসিয়ে দিল
উত্তর থেকে দক্ষিণে বাসে চরলাম,
পূর্ব থেকে পশ্চিমে রিকসায় চরলাম, হাওয়ার উড়িয়ে দিলাম হাতপাখা
মনে হচ্ছে আমার দেহের ভিতরে এই গ্রীষ্মের তপ্ত হাওয়া ঢুকে পড়েছে।
দোকানের ছোট ছোট জেনারেটরগুলি আমার ভিতরে চলতে শুরু করেছে
ঢাকা থেকে আমি চলে গেছি সিচুয়ানের ভূমিকম্পে
ছোট ছোট শহরগুলি দেবে যাচ্ছে

সকাল না হতেই


সকাল না হতেই, জ্যৈষ্ঠ মাসের পাখিরা ডাকছে ‘থ্যাঙ্কিয়্যু’
ঢাকার পাখিরা শিখলো করে ইংরেজী
পাখিগুলি সব ভদ্রপাখি
যদিও কাকেরা ডাকছে হায় হায়
যেনবা ওরা খবর পেয়েছে
মিয়ানমারে চিনে মানুষের খুব দিন অসহায় সাইক্লোন আর ভূমিকম্প

তুমি কি বিশ্বাস করো, পাখিরা মানুষের মনের কথা বোঝে?
নইলে কেনো সে বলছে থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ,
তোমাকে ধন্যবাদ, ধন্যবাদ তোমাকে
আমাকে তুমি দিয়েছো যে তোমার অমূল্য মন
যার তুলনা নই এ পৃথিবীতে
দেখো কিযে শিউরে উঠছে আমার ত্বক
শুধু ভাবতেই তোমার প্রসঙ্গ এই বেলা।
আজকাল প্রায়ই প্রত্যুষে

আজকাল প্রায়ই প্রত্যুষে উঠে বসে থাকিদ
দেখতে দেখতে রাস্তা ও গাছ ভেসে ওঠে অন্ধকার থেকে
আকাশে লুকায় প্রতিপদের চাঁদ লজ্জার
ছেলেটি যেনবা বাড়ি ফেরে নাই রাতে
পথে পথে আর এখানে সেখানে দেরী করে
সূর্য ওঠার আগেই ফিরছে আজ ঘরে

বলতো এসব দেখে কি মনে পড়ে যায়?
কৃষ্ণ ফিরছে সারারাত পরে রাধার আঙ্গিনায়
কলংকিত চাঁদ সে কারণ শত সখীর ব্যস্ত বিবিএ
আমি বলি, খেলে আমার মাথাটি চিবিয়ে
সারা দুপুর আর বিকাল সন্ধ্যা
ক্লান্ত আমাকে দেখাচ্ছে খুব অফিস ফেরতা
আসলে কি হয়েছে তোমার সঙ্গে সে কথা কাউকে বলা কি যায়?
খুবতো হাসছো মন খুলে
এদিকে আমাকে বাসায় ঢুকতে হচ্ছে মুখ শুকনো করে।

পাশাপাশি অনেকগুলি দালান

পাশাপাশি অনেকগুলি দালানের মধ্যে
দাঁড়িয়ে আছে একটা মাত্র গাজর রঙের দালান
আমি দেখতে থাকি তাকেই
মাঠ ভর্তি কোলাহল, যেন তুমি খেলছো ছোটবেলাকার ছেলেমেয়েদের মিশ্র ফুটবল
সূক্ষ্ণ কলাকৌশল যার ছিল না
সূর্যাস্তের দিকে পিঠ দিয়ে বসে থাকায়
দালানগুলির ওপর শেষ আলোকচ্ছটা ঠিকরে পড়ার শব্দ বেশ টের পাচ্ছি

এই বিকালটা যেন একটা ক্ষুধার্ত কাছিম
জবা ফুলগুলি চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে
তার পাশে বসে, তোমার নাম মিশেল,
তুমি পূরানো ও নতুন দিনকে চঞ্চল স্রোতে বেঁধে দিচ্ছ

একটা ছাতার মত আকাশের নিচে
একটা কাপের মত আলো অন্ধকারে
পাষানের সাথে ঝর্নাকলমের বিয়ে হচ্ছে

তোমার ক্রিকেট পিচে

তোমাকে স্পর্শ করে বাতাস ও বইতে পারে না
তোমার কাছে এসে পুলিসের বাঁশি থেমে যায়
সেই প্রায় আয়তাকার মাঠটি থেকে সবার চোখ এসে
তোমার ক্রিকেট পিচে একবার করে বল করে যাচ্ছে

তোমাকে স্পর্শ করে যাচ্ছে পুরানো পাখিরা
তোমাকে দেখে যাচ্ছে কার্নিশের ছায়া
তোমাকে স্পর্শ করে করে গেল অনেক গাছের ভিড়ে
দেয়াল ঘেঁষা একটা ছোট্টো চারা

তোমাকে ঘুরে গেল একটা বদমাশ মাছি
কার যেন রেকর্ড করা এস্রাজের সুর
তোমার বাহুর সোনালী হলদে ত্বকের নিচ থেকে এমন
মরমী শিরাগুলি ছুঁয়ে গেল আমার জন্মদিন
যেন পৃথিবীতে কোন কালে ক্ষুধা তৃষ্ণা ক্ষমতার কোন সমস্যা ছিল না
আমরা শুধু চুপচাপ বসে ছিলাম।

কেমন ভেজে রেখেছে ফুলগুলি

কেমন ভেজে রেখেছে ফুলগুলি, কেমন সাজানো টবে গাছ
বাটি ভর্তি পদ্মার ইলিশ, থোকা থোকা অন্ধকার, স্বচ্ছ পানির দেশি সরপুটি
সবাই খাচ্ছে সবাইকে, কেউ বন্ধুর চাঁদামাছ
সহপাঠির উষ্ণ ভাজা
সম্পর্কের আম জাম, নতুন পরিচয়ের তালশাস
গল্পের রসালো লিচু থেকে খোসা ছাড়িয়ে
অনেকেই টুকটাক আলাপ করছিল

কিন্তু তোমাকে আমার খেতেই ইচ্ছা করল না
মনে হলো একদিনে না খেয়ে
বহুদিন একটু একটু করে দেখেই থাকিনা!

তোমাকে নিয়ে হেটে আসি

চলো তোমাকে নিয়ে হেটে আসি মানিকদি’র মাঠ
যেখানে ঢাকা শহর তলিয়ে যেতে যেতে একটু ভেসে উঠছে
সামরিক ছাউনির রাগ থেকে বাঁচার জন্য আমরা কতকিছুই না করতে চাই

রাত এখন মুক্তি পাবে কি?
বিছানার নিচে নড়ে উঠছে শর্ষের বিচি
আষাঢ় মাসের রাতে কান পেতে শুনতে পাচ্ছি
চিড়িয়াখানার অচেনা পশুদের দীর্ঘশ্বাস

তুমুল বৃষ্টির রাস্তায় আছড়ে পড়ার শব্দে
শুনতে পাচ্ছি তোমার ফোঁপানোর শব্দ
তুমি গুচ্ছগুচ্ছ ভোরের শিশুদের জন্ম দেবে বলে কি
এমন রাতগুলিতে একা থাকা বেছে নিলে
যখন ক্রুদ্ধউরু ভালবাসতে চায়
তখন এলোমেলো হচ্ছে বকুলের ঝরে যাওয়া

মানিকদি’র আকাশে আমরা খেলনা হেলিকপ্টার ওড়াতে গিয়ে
হাতে পেলাম ব্যাটারী শেষ হবার লাল সংকেত
ভিজে যাবার পরেও দরজাটা খোলা রইল
তোমার গলার সাথে আমার গলার মিল হবার জন্য


হাতে গোনা কয়েকটা দিন

হাতে গোনা কয়েকটা দিন। গ্রীষ্মের পর বর্ষাকাল।
তীব্র সূর্যের দিনগুলি ভিজা দিনে প্রবেশ করছে।

আমি বসে বসে কাঁদি, কিন্তু কোন কান্নার চিহ্ণই তো আমার নাই।
হাতে গোনা কয়েকটা মাত্র দিন বাস্তব
আর সব আমার কল্পনার রংয়ে ছন্দে বোনা
তোমার একটা কানের ছবি তোলা
তোমার একটা কানফুল মেঝেতে কুড়িয়ে পাওয়া
তোমার একটা অল্প লালচে চুল আমার ঘরে

হাতে গোনা কয়েকটা মাত্র বাস্তব দিন নিয়ে
আমি জুয়া খেলায় নেমেছি কল্পনার সাথে
তুমুল বৃষ্টিতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছি আর
নিজেকে তুলে দিচ্ছি হুড তোলা রিকসার
একটুকরা পলিথিনের পর্দার পিছনে
কি গাদাগাদি করেই না বসেছি আর
কি চেষ্টা করেই না স্পর্শ বাঁচানোর কষ্ট করে যাচ্ছি
যাতে তুমি কোন ভুল সংকেত আমার কাছ থেকে না পেয়ে যাও

তাহলে বাস্তব কি ঐ তোমার স্পর্শ বাঁচানো?
আর কল্পনা হলো শক্ত করে তোমার বা হাতের পাঁচটা আঙ্গুলের মধ্যে
আমার ডান হাতের পাঁচটা আঙ্গুল খুব জোর দিয়ে চেপে ধরা?

3 comments:

Unknown said...

কবিতার এত গুণ তোমারো জানিনাতো যাবে কই
পাবে কে ধন্যবাদ দিলে

কাজল শাহনেওয়াজ said...

যে পড়ে,
কবিতা যায় তারই কাছে
উড়ে উড়ে,
তাকে দেখে এসে
কবিকে বর্ণনা করে ঘুরে ঘুরে
কেমন ধন্যবাদ দিল সে, কেমন পাবে সে উত্তরে!

Unknown said...

উড়ে আসে কই ধরতে হয় জাল পেতে অবাক হই
অগুণতি চড়ু্‌্‌ই শালিকের মাঝে একখান শং্খচিল
তখন কে যে কার কাছে ধরা...

আপাতত এই কবিতাগুলো না পড়ার বন্চনা থেকে মুক্ত
ভাল লাগছে তবে ভাল লাগার কথাগুলো ভাল করে
বলতে পারিনা

তবে F12-কে অবশ্যই থ্যাঙ্ক য়ু ....... কি বুঝে